মোহাম্মদ রিদুয়ান হাফিজ কক্সবাজার প্রতিনিধি: থার্টি ফাস্ট নাইট মানে উৎসবের আমেজ। রাতের আকাশে আতশবাজি এবং হাজারো রঙ্গিন ফানুশের দখলে নেয়া আকাশ। কক্সবাজারে এসবের কিছুই নেই এবারও। ঘটা করে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের উন্মুক্ত আয়োজনে অনুষ্ঠান আয়োজনে নিষেধাজ্ঞা ঘোষনার পর পর্যটনে নেমে এসেছে ভাটা। এবার বছরের শেষ সূর্যাস্ত এবং নতুন বছরকে বরণ করতে আসেনি আশানুরূপ পর্যটক। যারা এসেছেন তাদের মুখেও হতাশার কথা আর চোখেমুখে বিষণ্ণতার ছাপ।
রবিবার (৩১ ডিসেম্বর) সৈকতের কলাতলী, সুগন্ধা এবং লাবণী পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায় এমন চিত্র।
রুবেল আহমেদ নামের ঢাকার সাভার থেকে আসা এক পর্যটক বলেন, যে আশা নিয়ে এসেছিলাম কক্সবাজারে সে আশা পূরণ হয়নি। আনন্দ-ফুর্তি করব থার্টি ফার্স্ট নাইটে এসব আসলে এখানে হচ্ছে না। শুধু সমুদ্র সৈকত দেখা ছাড়া আর কিছুই করার নেই।
আরেক পর্যটক সাজিন চৌধুরী বলেন, আমি অনেক দেশে ঘুরেছি। বিভিন্ন দেশের থার্টি ফার্স্ট নাইটের আয়োজন দেখেছি। এখানেও এরকম হওয়া উচিত। নাহয় দেশীয় পর্যটকরাও বিদেশে চলে যাবে।
এদিকে ইংরেজি নতুন বছরকে বরণ ও পুরাতন বছর বিদায়ে আশানুরূপ পর্যটক নেই কক্সবাজারের হোটেল-মোটেলগুলোতে। গেলো কয়েকবছর ধরে সৈকত পাড়ে উন্মুক্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন বন্ধ থাকায় এমন অবস্থা বলছেন ব্যবসায়ীরা। এবার সৈকত পাড়ের আশপাশের সকল মদের বার বন্ধ রাখার ঘোষণাও এসেছে প্রশাসনের কাছ থেকে। এবারে হোটেল মোটেলে বুকিংএর হার অনেক কম বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
পর্যটন উদ্যোক্তা হোটেল দি গ্র্যান্ড সেন্ডির স্বত্বাধিকারী আব্দুর রহমান বলেন, গেলো কয়েক বছর ধরে কক্সবাজারে থার্টি-ফার্স্ট নাইট উদযাপনে পর্যটকদের সংখ্যা কমছে আনুপাতিক হারে। বিনোদনহীন সময় পার করতে হওয়ায় পর্যটকরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে কক্সবাজার থেকে। সবকিছুর ঊর্ধ্বে কক্সবাজারকে রাখা উচিত।
মেরিন ড্রাইভ হোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, উন্মুক্ত আয়োজনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় এবারে হোটেল মোটেলে বুকিং এর হার অনেক কম। সকল হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউজ ব্যবসায়ীদের অবস্থা করুণ।
উন্মুক্ত আয়োজন বন্ধ থাকলেও অনুমতি নিয়ে অভ্যন্তরীণ-ভাবে অনুষ্ঠান আয়োজন করা যাবে। তবে আশানুরূপ পর্যটক না থাকায় তারকা মানের হোটেলগুলোতেও নেই তেমন আয়োজন।
তারকামানের হোটেল ‘হোটেল দি কক্স টুডে’র অপারেশন ম্যানেজার আবু তালেব বলেন, নির্বাচনের বছর যেহেতু মানুষের ঘুরার প্রতি তেমন আগ্রহ নেই। কক্সবাজার উন্মুক্ত আয়োজনে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও আমরা প্রতিবছর অভ্যন্তরীণ আয়োজন করি। কিন্তু এবার আমরা এটাও করছি না।
উন্মুক্ত আয়োজন বন্ধ থাকলেও পর্যটকরা যেনো নির্বিঘ্নে সৈকতে বর্ষ উদযাপন করতে পারেন, তারজন্য নেয়া হয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইয়ামিন হোসেন-কে বলেন, যেহেতু নির্বাচনী বছর তাই কক্সবাজারে সারাদেশের মতো উন্মুক্ত আয়োজনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এটা আমাদের একার সিদ্ধান্ত না। কিন্তু তারপরও কক্সবাজারে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ-কে বলেন, কক্সবাজারে পর্যটকরা সারারাত আনন্দ উদযাপন করতে পারবে। পর্যটকদের যেনো কোন অসুবিধা না হয় সেজন্য কাজ করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া জেলা পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ, র্যাবসহ অন্যান্য সংস্থাও কাজ করছে।
এছাড়া থার্টি ফার্স্ট নাইটকে কেন্দ্র করে সমুদ্র সৈকত ছাড়াও আশপাশের যেসব পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে সেখানেও বাড়ানো হয়েছে পুলিশী তৎপরতা।